
মঙ্গলবার কুমিল্লার শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে আবাহনীকে হারিয়েছে মোহামেডান। ৪-৪ গোলে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়। ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ ও নয় বছর পর শিরোপা জিতেছে মোহামেডান। সবশেষ ২০১৪ সালের স্বাধীনতা কাপ জিতেছিল সাদা-কালো জার্সিধারীরা।
নির্ধারিত ৯০ মিনিট ৩-৩ গোলে সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ৪-৪ গোলের সমতা। শেষ পর্যন্ত ৮ গোলের এই নাটকীয় ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল টাইব্রেকার। যেখানে পেনাল্টি মিস করেন আবাহনীর দুই বিদেশী খেলোয়াড় রাফায়েল আগুস্তো ও দানিয়েল কলিনদ্রেস। অন্যদিকে মোহামেডানের হয়ে একটি পেনাল্টি মিস করেন শাহরিয়ার ঈমন। তবে এরপর চতুর্থ শট নিতে আসা কামরুল ইসলাম জাল খুঁজে পেলে উল্লাসে মেতে ওঠে মোহামেডান।
কুমিল্লার ধর্মসাগর পাড়ে ম্যাচের শুরুতে তেমন উত্তেজনা ছিল না। তবে যত সময় গড়িয়েছে ম্যাচের উত্তেজনার পারদ ততই তুঙ্গে উঠেছে। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান দারুণ এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে দ্বিতীয়ার্ধে। মোহামেডানের সোলেমান দিয়াবাতেও গড়েছেন নতুন এক ইতিহাস। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে প্রথম চার গোল করলেন তিনি।
প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই মোহামেডানের ওপর চড়াও হয়ে খেললো আবাহনী। একের পর এক আক্রমণে মোহামেডানের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখলো পুরোটা সময়। তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় মিনিটে আরিফ হোসেনের লম্বা থ্রো-ইন হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিল মোহামেডান। ফিরতি বলে রাফায়েল আগুস্তোর হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
সপ্তম মিনিটে ডি-বক্সের ডান প্রান্ত ধরে এগিয়ে এসে শট করেছিলেন এমেকা। তবে তার বাঁকানো শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়। গোলের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি আবাহনীকে। ১৫ মিনিটে এমেকার ডিফেন্স চেরা ক্রস পেয়ে যান ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তার নিচু শট গোলরক্ষক সুজনের পায়ে লেগে জালে জড়ায়। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী।
গোল হওয়ার পর আবাহনীর সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠে। গ্যালারিতে নীল-হলুদ ধোঁয়ার মশাল জ্বালিয়ে উদযাপন করেন তারা। ২৯ মিনিটে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে কলিনদ্রেসের ক্রস বক্সের ভেতর পেয়ে যান এমেকা। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে বল দেন বাঁ প্রান্তে থাকা ফয়সালের কাছে। তার শট রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক।
৪৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কলিনদ্রেস। মাঝ মাঠ থেকে লম্বা করে বল বাড়ান হৃদয়। বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান কলিনদ্রেস। দ্রুত গতির শটে দূরের পোস্টে বল জালে জড়িয়ে দলকে ২-০ গোলের লিড এনে দেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে মোহামেডান। তাতে আক্রমণে ধার বাড়ে সাদাকালো শিবিরে। তার সুফল ১৫ মিনিটের মধ্যেই পায় দলটি। ৫৬তম মিনিটে কামরুলের ক্রস আবাহনীর আলমগীর ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পারলে চলে যায় দিয়াবাতের কাছে। লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে জায়গা করে দারুণ ভলিতে ব্যবধান কমান তিনি।
এর চার মিনিট পর সমতা ফেরান মোহামেডান অধিনায়ক। মুজাফ্ফর মুজাফ্ফরভের দূরপাল্লার শট আবাহনী শহীদুল আলম সোহেল ঝাঁপিয়ে ঠেকালে বাঁ প্রান্তে পেয়ে যান জাফর ইকবাল। তার কাটব্যাক থেকে লাফিয়ে হেড দিয়ে বল জালে পাঠান দিয়াবাতে।
চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করা আবাহনী এরপর আক্রমণের ধার বাড়ায়। ৬৬তম মিনিটে রহমতের ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন এমেকা। ফের এগিয়ে যায় আবাহনী। ৮৩তম মিনিটে আবারও মোহামেডানের ত্রাতা অধিনায়ক দিয়াবাতে। কামরুলের কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে আরও একটি দুর্দান্ত হেডে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি দলকে সমতায় ফেরান মালির এই ফরোয়ার্ড।
অতিরিক্ত সময়েও আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দুই দল। তবে প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে লিড নেয় মোহামেডান। সফল স্পটকিক থেকে প্রথমবারের মতো সাদাকালো শিবিরকে লিড এনে দেন দিয়াবাতে। ডি-বক্সের মধ্যে তাকে আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মোহামেডান।
তবে ম্যাচের রঙ বদলের তখনই ঢের বাকি। ১১১তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় মোহামেডান। রাফায়েলের ভলি ঠেকাতে গিয়ে চোট পান গোলরক্ষক সুজন। মাঠ ছাড়েন কাঁদতে কাঁদতে। তার বদলি নামেন আহসান হাবিব বিপু। মাঠের নামার দুই মিনিটের মধ্যেই গোল হজম করতে হয় তাকে। ডি-বক্সের বাইরে থেকে রহমতের বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে হাত লাগালেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তবে টাই-ব্রেকারে দুটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে শেষে নায়ক এই বদলি গোলরক্ষকই।
