Google search engine

শুক্রবার শুরু হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নতুন মৌসুম। এনফিল্ডে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের বিপক্ষে বোর্নমাউথের ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জমজমাট এই লিগ। প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা ফুটবলবোদ্ধাদের জন্যও অনেক কঠিন। এখানে টেবিলের তলানির দলও শীর্ষ দলকে হারিয়ে দেয়। চমকের পর চমক দেখা যায়।

গত মৌসুমের কথাই ধরা যাক। কে ভেবেছিল, ম্যানসিটি ও আর্সেনালকে টপকে আনকোরা কোচ নিয়ে লিভারপুল শিরোপা জিতে নেবে? অন্যতম ফেভারিট ম্যানইউ ও টটেনহ্যাম কোনোমতে রেলিগেশন বাঁচিয়ে ১৫তম ও ১৭তম হয়েছিল। কয়েক বছর আগে শিরোপাজয়ী লিস্টারসিটি রেলিগেটেড হয়ে যায়। এবার তো প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো বিশ্বের নামী সব ফরোয়ার্ডদের মেলা বসিয়েছে। তাই এবার সত্যিকার অর্থেই ‘গোলের খেলা ফুটবল’ হয়ে উঠতে পারে প্রিমিয়ার লিগ। মোদ্দাকথা, স্ট্রাইকারদের সফলতার উপরই প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নির্ধারণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেসব সম্ভাবনার কথা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।

ইয়োকেরেসে ঘুচবে গানারদের অপেক্ষা: টানা তিনবার রানার্সআপের পর এবার শিরোপার জোরালো দাবিদার ভাবা হচ্ছে আর্সেনালকে। গত মৌসুমেই তাদের রক্ষণ ছিল লিগের সেরা, সালিবা-গ্যাব্রিয়েলের দেয়াল টপকে মাত্র ৩৪ বার তাদের জালে বল গেছে। এবার সেটি ধরে রেখে জুবিমেন্দি যোগ হওয়ায় মাঝমাঠের শক্তি বেড়েছে তাদের।

গত মৌসুমে তাদের ভুগিয়েছিল মূলত আক্রমণভাগ। একের পর এক খেলোয়াড় চোটে পড়ায় মিডফিল্ডারকেও সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলাতে হয়েছে গানার বস মিকেল আর্তেতার। এবার তারা পর্তুগিজ লিগ চ্যাম্পিয়ন স্পোর্টিং লিসবন থেকে এনেছে ভিক্টর ইয়েকেরেসকে। সুইডিশ এ স্ট্রাইকার গত মৌসুমে ৪৫ গোল করেছেন। আর্সেনালের ২২ বছরের অপেক্ষার ইতি টানতে পারবেন তিনি?

জমবে কী সালাহ–উইর্টজ যুগলবন্দি: ইয়ুর্গেন ক্লপের আচমকা বিদায়ে অনেকটা হুট করেই লিভারপুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন আর্নে স্লট। তবে প্রথম মৌসুমেই বাজিমাত করেন ডাচ এ কোচ। চলতি দলবদলে ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে ফ্লোরিন উইর্টজ, হুগো একিতিকি, জেরেমি ফ্রিমপং, কেরকেজকে দলে টেনেছেন। আরও ক’জনকে কেনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। শিরোপা ধরে রাখার জন্য অকাতরে অর্থ খরচ করছে লিভারপুল। তারপরও চ্যালেঞ্জে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

আক্রমণভাগের পরীক্ষিত সৈনিক লুইস দিয়াজ চলে গেছেন বায়ার্ন মিউনিখে, সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু হয়েছে দিয়াগো জোতার। ডারউইন নুনেজ সৌদি ক্লাবে চলে যাওয়ার পথে। প্রায় নতুন এক আক্রমণ ভাগ নিয়ে নামবে অলরেডরা। সেই নবীনদের সঙ্গে মোহামেদ সালাহর বোঝাপড়া কেমন হয় তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে অবশ্য সালাহ–উইর্টজ জুটির যাদুকরী কিছু মুভ দেখা গেছে। একিতিকির সঙ্গেও সালাহর বোঝাপড়া ভালো।

সিটিজেনদের হাসি ফেরাতে পারবেন হালান্ড: টানা চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গত মৌসুমে পা হড়কে গিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটির। গত মৌসুমে তিন নম্বর হওয়াটাকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না সিটি বস পেপ গার্দিওলা। সে জন্য দলবদলের গত দুটি উইন্ডোতে শক্তি বাড়ানোর জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন তিনি। চলতি দলবদলে ডাচ মিডফিল্ডার তিজানি রেইজ্যান্ডার্স, ফরাসি প্লেমেকার রায়ান চের্কি ও আলজেরিয়ান উইং-ব্যাক রায়ান আইত-নুরিকে দলে ভিড়িয়েছে সিটিজেনরা। দলের গোলমেশিন আর্লিং হালান্ডের সঙ্গে রায়ান চেরকির বোঝাপড়ার উপর নির্ভর করছে তাদের সাফল্য।

তবে দুঃসংবাদ হচ্ছে, মৌসুমের শুরুতে প্রায় এক মাস ব্যালন ডি’অরজয়ী রদ্রিকে পাচ্ছে না তারা। চোটের জন্য গত মৌসুমের প্রায় পুরোটা মাঠের বাইরে ছিলেন স্প্যানিশ এ মিডফিল্ডার। চোট কাটিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে ফিরেছিলেন। সেই টুর্নামেন্টে আবার চোট পেয়েছেন তিনি। গতকাল গার্দিওলা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে ফিরতে পারেন গ্রোয়েন ইনজুরিতে পড়া রদ্রি।

তারুণ্যে ভরসা ব্লুজদের: এবারের লিগে অন্যতম চ্যালেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে চেলসি। ক’দিন আগে ক্লাব বিশ্বকাপ জয় এর অন্যতম ইঙ্গিত। কোল পালমার, ময়েসেস কায়সেদো, এনজো ফার্নান্দেজের মতো প্রতিভাকে ধরে রেখেছে তারা। সে সঙ্গে চলতি দলবদলে তারা জোয়াও পেদ্রো, লিয়াম ডেলাপ, জোরেল হাতোর মতো দারুণ ক’জন ফুটবলারকে দলে ভিড়িয়েছে। বিশেষ করে পেদ্রো ও ডেলাপ আসার পর তাদের আক্রমণ ভাগ পুরো বদলে গেছে, ক্লাব বিশ্বকাপ যার প্রমাণ। দলে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলের বিস্ময়বালক এস্তেভাও।

ম্যানইউ থেকে আর্জেন্টাইন উইঙ্গার আলেহান্দ্রো গার্নাচোও আসছেন। তবে গত সপ্তাহে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতির সময় সেরা একাদশের সেন্টার-ব্যাক লেভি কোলউইল চোটে পড়ায় তারা কিছুটা ভুগতে পারে।

রেড ডেভিলদের নয়া আক্রমণভাগ: রোবেন আমোরিমের জন্য আসন্ন মৌসুমটা অগ্নিপরীক্ষার মতো। পর্তুগিজ এ কোচ এবার যদি সেরা চারে দলকে রাখতে না পারেন, তাহলে তাঁর ছাঁটাই কেউ আটকাতে পারবে না। গত মৌসুমে ম্যানইউ সবচেয়ে বেশি ভুগেছিল আক্রমণ ভাগ নিয়ে। রাশফোর্ড, গার্নাচো, হুয়েলুন্দদের বিদায় করে এবার নতুন এক আক্রমণ ভাগ নিয়ে নামবে ম্যানইউ।

ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যাথিউস কুনহা, ক্যামেরুনের ব্রায়ান এম্বিউমোর সঙ্গে লাইপজিগ থেকে গতকাল যোগ দিয়েছেন স্লোভেনিয়ান স্ট্রাইকার বেঞ্জামিন সেসকো। প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে এই তিন ফরোয়ার্ডকে দলে ভিড়িয়েছেন আমোরিম। এ তিনজন কি পারবেন রেড ডেভিলদের ভাগ্য বদলাতে!

Google search engine